নোবেল পুরস্কার, বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলোর একটি, আলফ্রেড নোবেল নামে এক সুইডিশ রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং দাতব্যকর্মী প্রতিষ্ঠিত করেন। আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৫ সালের ২৭শে নভেম্বর তার নিজের উইল লিখে যান, যেখানে তিনি তার সম্পদের একটা বিশাল অংশ নোবেল পুরস্কার হিসেবে পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদানের জন্য রেখে যান। ১৮৯৬ সালে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পর ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
নোবেল পুরস্কার পাঁচটি ক্ষেত্রে দেওয়া হয়: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা বা শারীরবিদ্যা, সাহিত্য এবং শান্তি। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে, সুইডিশ ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের ৩০০তম বার্ষিকীতে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার চালু করে।
প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানটি অক্টোবর মাসে হয়। পুরস্কার ঘোষণার সময়সূচি সাধারনত এই রকম থাকে:
– চিকিৎসা বা শারীরবিদ্যা: অক্টোবরের প্রথম সোমবার
– পদার্থবিদ্যা: প্রথম মঙ্গলবার
– রসায়ন: প্রথম বুধবার
– সাহিত্য: প্রথম বৃহস্পতিবার (কখনও কখনও পরিবর্তিত হতে পারে)
– শান্তি: প্রথম শুক্রবার
– অর্থনীতি: পরবর্তী সোমবার
এই সময়সূচির মধ্য দিয়ে নোবেল কমিটি যথাক্রমে বিভিন্ন বিষয়ের পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। এই পুরস্কারগুলি ডিসেম্বর মাসে স্টকহোম এবং অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে। ১৯১৪ এবং ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছু ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার প্রদান স্থগিত করা হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে আবার বিজয়ীরা পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বা বাধ্য হয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের লে ডুক থো ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ভাগাভাগি করলেও পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
নোবেল পুরস্কার অর্জন করা একটি বিশেষ গৌরবের বিষয় এবং এর ফলে বিজয়ীদের জীবনে বিশেষ প্রভাব পড়ে। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আরো বেশি মর্যাদা পান এবং তাদের কাজের প্রতি নতুন উদ্দীপনা পান। তাছাড়া, নোবেল পুরস্কারের সাথে অর্থ পুরস্কারও প্রদান করা হয় যা বিজয়ীদের গবেষণা ও উন্নয়নে বিশেষ সহায়ক হয়।
প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় সারা বিশ্বের মানুষ আগ্রহভরে অপেক্ষা করে। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানটি গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া তুমুল হয়ে ওঠে। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই তাদের কাজের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সমগ্র বিশ্বে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় একটি বিশাল আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং বিজ্ঞান, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই পুরস্কারগুলো কেবলমাত্র ব্যক্তিগত সম্মান নয় বরং মানবতার কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।